টেকসই উন্নয়ন কি? টেকসই উন্নয়নের উদ্দেশ্য, বৈশিষ্ট্য ও লক্ষ্য
টেকসই উন্নয়ন কাকে বলে?
উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সেসব উন্নয়ন কর্মকান্ড যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে ঘাটতি বা বাঁধার কোন কারণ হয়ে না দাঁড়ায়, সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রেখে পরিকল্পিত উন্নয়নই হল টেকসই উন্নয়ন বা Sustainable Development।
টেকসই উন্নয়ন মূলত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে গৃহীত একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা।
উন্নয়ন মূলক কার্যক্রমের ফলে যেন প্রাকৃতিক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে অর্থাৎ প্রকৃতিকে ঠিক রেখে উন্নয়ন কর্মকান্ড সম্পাদন করা হয়।
টেকসই উন্নয়ন কেবলমাত্র পরিবেশ সংরক্ষণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নই নয়; বরং সামাজিক এবং মানবিক উন্নয়নও এর আওতাভুক্ত।
যেমনঃ মানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমে দারিদ্র্য ঘোচানো। নারী-পুরুষ একে অপরকে সহযোগিতার মাধ্যমে সমাজ থেকে জেন্ডার বৈষম্য দূর করা ইত্যাদি।
প্রেক্ষাপটঃ
পরিবেশগত ও উন্নয়নমূলক সমস্যা চিহ্নিত করা এবং সেসব সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করার জন্য ১৯৮৩ সালে United Nations, নরওয়ের ২৯তম প্রধানমন্ত্রী গ্রো হারলেম ব্রুন্ডল্যান্ডকে প্রধান করে একটি স্বাধীন সংস্থা হিসেবে Brundtland Commission গঠন করে। যা আনুষ্ঠানিকভাবে World Commission on Environment and Development পরিচিত। এই কমিশনের মূল লক্ষ্য ছিল টেকসই উন্নয়নের বিষয়ে বিশ্বের সবগুলো স্বাধীন দেশকে একত্রিত করা।
১৯৮৭ সালে এই কমিশনটি ‘Our Common Future’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে সর্বপ্রথম ‘টেকশই উন্নয়ন’ বা ‘sustainable development’ এর ধারণাটিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছিল।
“Development that meets the needs of the present without compromising the ability of future generations to meet their own needs.”
অর্থাৎ, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিজস্ব চাহিদা পূরণের সম্ভাবনা বা সক্ষমতার সাথে কোন ধরনের আপোস না করে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা পূরণ করাকে টেকসই উন্নয়ন বলা হয়।
Brundtland Commission প্রদত্ত Our Common Future প্রতিবেদনে, টেকসই উন্নয়নমূলক প্রত্যাশিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য বিশ্বের সবদেশের দ্বারা উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা বা কৌশল গঠনের উপর জোর দেয়।
কমিশনের প্রতিবেদন অনুসারে, স্থিতিশীল উন্নয়ন অর্জন করতে নিম্নলিখিত বিষয় গুলির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া খুব জরুরী -
১) স্থিতিশীল পরিবেশ
২) স্থিতিশীল পৃথিবী
৩) স্থিতিশীল মানব উন্নয়ন
৪) স্থায়ী শান্তি ও বিকাশ
৫) স্বল্প অপচয়
৬) টেকসই প্রযুক্তি
টেকসই উন্নয়নের মূলভিত্তিঃ
Rio Earth Summit, 1992 এ সমাজ, পরিবেশ এবং অর্থনীতি এই ৩ টি বিষয়কে টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি বা স্তম্ভ হিসেবে গ্রহণ করা হলেও, পরবর্তীতে ২০১০ সালে মেক্সিকো সম্মেলনে বিশ্বনেতারা ৪র্থ স্তম্ভ হিসেবে সংস্কৃতিকে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব পেশ করেন। যা পরবর্তীতে, United Cities and Local Governments (2010) এর ঘোষণাপত্রে অনুমোদন প্রাপ্ত হয়।
- সমাজ
- পরিবেশ
- সংস্কৃতি
- অর্থনীতি
এরা একে অপরের থেকে আলাদা নয়, বরং আন্তঃ সম্পর্কিত।
Sustainability বা স্থায়িত্ব হল ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তাশীল এমন একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করা, যেখানে একটি উন্নতমানের জীবনযাত্রার জন্য পরিবেশগত, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক বিবেচনাগুলি একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় বিদ্যমান থাকে।
এজন্য সামাজিকভাবে ন্যায়সঙ্গত, পরিবেশগতভাবে টেকসই, সুরক্ষিত সাংস্কৃতিক বৈচিত্র এবং অর্থনৈতিকভাবে দক্ষ করে ভবিষ্যতের জন্য দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন করাই হল টেকসই উন্নয়ন।
উদাহরণস্বরূপ, একটি সমৃদ্ধ সমাজ তার নাগরিকদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও সম্পদ, নিরাপদ পানীয় জল এবং বিশুদ্ধ বায়ু সরবরাহের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশের উপর নির্ভর করে।
টেকসই উন্নয়নের প্রধান উদ্দেশ্যঃ
স্থিতিশীল বা টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণের জন্য কিছু উদ্দেশ্য অনুসরণ করা হয়ে থাকে।
১. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার
২. জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ
৩. সামাজিক ন্যায় বজায় রেখে সম্পদের ব্যবহার করা
৪. সম্পদের পুনব্যবহার
৫. মানুষের গুনগত মানের বিকাশ – ভালো স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও উচ্চ মাথা পিছু আয়
৬. পরিবেশ সম্পর্কীত বিষয় গুলি বিশ্বের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা
৭. মানুষ কে বিশ্ব সম্পদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে বোঝানো।
৮. স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য সকলের অংশগ্রহণ আবশ্যক
টেকসই উন্নয়নের বৈশিষ্ট্যঃ
Sustainable development বা স্থিতিশীল উন্নয়নের কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।
যেগুলো-
১) পরিবেশকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন দীর্ঘ মেয়াদি উন্নয়নমূলক কার্যক্রমকে চালিয়ে যেতে সহায়তা করা।
২) প্রাকৃতিক সম্পদ ও ভূপ্রাকৃতিক পরিবেশের গুনগত মান বজায় রেখে মানুষের জীবন যাত্রার মানের উন্নতি করার চেষ্টা করা।
৩) প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পদের হ্রাস বা ধ্বংস না করে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।
স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যে বৈশ্বিকভাবে সকল দেশের আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এর দিকে খেয়াল রাখা উচিৎ-
- জীববৈচিত্র্য
- গ্রিন হাউস গ্যাস
- ক্ষতিকারক ও বিষাক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
- শিল্পাঞ্চলের দূষণ নিয়ন্ত্রন
- নিরাপদ বাস্তুসংস্থানের ব্যবস্থা
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বনেতাদের উপস্থিতিতে নতুন করে Global Sustainable Development Goals (SDGs) গৃহীত হয়, যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় নির্ধারন করা হয়। এই সংশোধিত নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বৈশ্বিকভাবে ১৭ টি প্রধান লক্ষ্য এবং তার সংশ্লিষ্ট অন্তর্বর্তী আরো ১৬৯ টি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবে। এটিই জাতিসংঘ কর্তৃক পরিচালিত এবং বৈশ্বিকভাবে সার্বজনীন পরামর্শের ভিত্তিতে নেয়া সর্বাপেক্ষা বড় কোন সিদ্ধান্ত।
SDG অনুযায়ী গৃহীত লক্ষ্যগুলো সার্বজনীন; ধনী- গরীব সকল দেশের জন্যই এসব প্রযোজ্য এবং প্রয়োগ করা সম্ভব। জাতিসংঘের অনুমান অনুযায়ী, উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অর্থায়নের বছরে ব্যয় হবে প্রায় $৪৫০০ বিলিয়ন ডলার। যা বৈশ্বিকভাবে ব্যবহৃত বার্ষিক সাহায্য অনুদানের চেয়েও ত্রিশ গুণ বেশি। এই নীতিমালার অন্যতম প্রধান অর্থই হল ২০৩০ সালের মধ্যে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য, রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি কোম্পানি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, সুশীল সমাজ সংস্থাগুলি সহ সকলকেই দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
UN প্রদত্ত টেকসই উন্নয়নের ১৭টি লক্ষ্য:
নির্ধারিত ১৭ টি প্রধান লক্ষ্যমাত্রা নিচে উল্লেখ করা হল।
- No Poverty - সর্বত্র সব ধরনের দারিদ্র্যের অবসান
- Zero Hunger - ক্ষুধার অবসান, খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টিমান অর্জন এবং টেকসই কৃষির প্রসার
- Good Health and Well-being - সকল বয়সী সকল মানুষের জন্য সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিতকরণ
- Quality Education - সকলের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক গুনগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টি
- Gender Equality - জেন্ডার সমতা অর্জন এবং সকল নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়ন
- Clean Water and Sanitation - সকলের জন্য পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা
- Affordable and Clean Energy - সকলের জন্য সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য, টেকসই ও আধুনিক জ্বালানি সহজলভ্য করা
- Decent Work and Economic Growth - সকলের জন্য পূর্ণাঙ্গ ও উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান এবং শোভন কর্মসুযোগ সৃষ্টি এবং স্থিতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন
- Industry, Innovation, and Infrastructure - অভিঘাতসহনশীল অবকাঠামো নির্মাণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই শিল্পায়নের প্রবর্ধন এবং উদ্ভাবনার প্রসারণ
- Reduced Inequalities - অন্তঃ ও আন্তঃদেশীয় অসমতা কমিয়ে আনা
- Sustainable Cities and Communities - অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ, অভিঘাতসহনশীল এবং টেকসই নগর ও জনবসতি গড়ে তোলা
- Responsible Consumption and Production - পরিমিত ভোগ ও টেকসই উৎপাদনধরন নিশ্চিত করা
- Climate Action - জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব মোকাবেলায় জরুরি কর্মব্যবস্থা গ্রহণ
- Life Below Water - টেকসই উন্নয়নের জন্য সাগর, মহাসাগর ও সামুদ্রিক সম্পদের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহার
- Life On Land - স্থলজ বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধার ও সুরক্ষা প্রদান এবং টেকসই ব্যবহারে পৃষ্ঠপোষণা, টেকসই বন ব্যবস্থাপনা, মরুকরণ প্রক্রিয়ার মোকাবেলা, ভূমির অবক্ষয় রোধ ও ভূমি সৃষ্টি প্রক্রিয়ার পুনরুজ্জীবন এবং জীববৈচিত্র্য হ্রাস প্রতিরোধ
- Peace, Justice, And Strong Institutions - টেকসই উন্নয়নের জন্য শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থার প্রচলন, সকলের জন্য ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথ সুগম করা এবং সকল স্তরে কার্যকর, জবাবদিহিতাপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণ
- Partnerships For The Goals - টেকসই উন্নয়নের জন্য বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব উজ্জীবিতকরণ ও বাস্তবায়নের উপায়সমূহ শক্তিশালী করা
Grammar
Read More
- Tea Stall - Paragraph for HSC and SSC
- School Magazine - Paragraph for HSC and SSC
- Load Shedding - Paragraph for HSC and SSC
- National Flag - Paragraph for HSC & SSC
- Mobile Phone - Paragraph for HSC & SSC
- Digital Bangladesh - Paragraph for HSC and SSC
- Internet - Paragraph for HSC & SSC
- Diaspora - Paragraph for SSC and HSC
- Dengue Fever - Paragraph for SSC and HSC
- Adolescence - Paragraph for SSC & HSC