বাংলা ব্যাকরণ (Bangla Grammar)
ব্যাকরণ কাকে বলে
"ব্যাকরণ" একটি সংস্কৃত শব্দ যার ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলো বিশেষভাবে বিশ্লেষণ করা। কোন ভাষাকে বিশ্লেষণ করলে সেই ভাষার উপকরণ এবং উপাদানগুলোকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করে ভাষার অভ্যন্তরীন শৃঙ্খলা সম্পর্কে জানা যায়। ব্যাকরণ ভাষার শৃঙ্খলা রক্ষা করে নিয়ম-কানুন প্রণয়ন করে এবং তা প্রয়োগের রীতি সুত্রবদ্ধ করে। সুতরাং, ব্যাকরণকে ভাষার আইন বলা যায়।
যে শাস্ত্রের সাহায্যে ভাষার স্বরূপ ও গঠণপ্রকৃতি নির্ণয় করে সুবিন্যস্ত করা যায় এবং ভাষা শুদ্ধরূপে বলতে, পড়তে এবং লিখতে পারা যায়, তাকে ব্যাকরণ বলে।
প্রত্যেক ভাষার মতো বাংলা ভাষারও নিজস্ব ব্যাকরণ আছে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, “যে শাস্ত্র জানলে বাংলাভাষা শুদ্ধরূপে লিখতে, পড়তে ও বলতে পারা যায় তার নাম বাংলা ব্যাকরণ। “
সব ভাষার ব্যাকরণের মতো বাংলা ব্যাকরণেও চারটি আলোচ্য বিষয় আছে। যেমন: ধ্বনিতত্ত্ব (Phonology), শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্ব (Morphology), বাক্যতত্ত্ব (Syntex) এবং অর্থতত্ত্ব (Semantics)
এখানে বাংলা ব্যাকরণের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো:
ভাষা কাকে বলে?
মানুষের বাকযন্ত্র থেকে উৎপন্ন এবং ভাবপ্রকাশে সক্ষম অর্থবোধক ধ্বনিকে বলা হয় ভাষা।
সমার্থক শব্দ বা প্রতিশব্দ
সমার্থক বলতে সমান অর্থকে বুঝায়। অর্থাৎ সমার্থক শব্দ বা প্রতিশব্দ হলো অনুরূপ বা সম অর্থবোধক শব্দ। যে শব্দ অন্য কোন শব্দের একই অর্থ কিংবা প্রায় সমান অর্থ প্রকাশ করে, তাকে সমার্থক শব্দ বলা হয়। সমার্থক শব্দের একটিকে অন্যটির প্রতিশব্দ বলা হয়।
একই শব্দের বিভিন্নার্থে প্রয়োগ
শব্দই ভাষার সম্পদ। বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডারে অসংখ্য শব্দ রয়েছে। এক একটি শব্দের এক একটি বিশেষ অর্থ আছে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় যে কোন একটি শব্দ শুধুমাত্র একটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত না হয়ে ভিন্ন ভিন্ন বিশেষ বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়। শব্দের এরূপ ব্যবহারকে ভিন্নার্থে প্রয়োগ বলা হয়।
বিকল্প শব্দ
কোন শব্দের সমজাতীয় অর্থ কিংবা ইতিবাচক অর্থ প্রকাশের জন্যে যে শব্দ ব্যবহৃত হয়, তাকে বিকল্প শব্দ বলে। বাংলা ভাষাসহ পৃথিবীর অধিকাংশ ভাষায় এ ধরনের শব্দ আছে। যেমন: কপাল – ভাগ্য, ললাট, নিয়তি।
প্রবাদ বাক্য
অর্থসহ বহুল ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয় প্রবাদ বাক্য।
বাংলা ভাষার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
ভাষার অগ্রগতি ঘটে বিবর্তন, রূপান্তর এবং ক্রমবিকাশের মধ্যে দিয়ে। এক্ষেত্রে ব্যাকরণের ভূমিকা হলো ভাষাকে নিয়মের শৃঙ্খলে বেঁধে না রেখে পরিবর্তনের ধারায় ভাষাকে সুশৃঙ্খল, গতিশীল ও জীবন্ত করে রাখা। অর্থাৎ ব্যাকরণ ভাষাকে নির্দেশ দেয় না, ভাষার বিষয়কে বর্ণনা করে মাত্র।
বাংলা ভাষায় ব্যাকরণের চর্চা খুব বেশি পুরনো নয়। খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য ইউরোপীয় বণিক গোষ্ঠী ও মিশনারিরা বাংলা ভাষা শেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এই বিদেশিরাই প্রথম বাংলা ভাষার লিখিত ব্যাকরণের সৃষ্টি করে। অষ্টাদশ শতাব্দীর চল্লিশের দশকে মানোএল দা আস্সুম্পসাঁও রচিত ‘ভোকাবুলারিও এম ইদিওমা বেনগল্লা, ই পর্তুগিজ: দিভিদিদো এম দুয়াস পার্তেস’ প্রথম বাংলা ব্যাকরণ। ১৭৪৩ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগালের রাজধানী লিসবন থেকে এটি রোমান হরফে মুদ্রিত হয়।
এরপর হুগলি থেকে ১৭৭৮ সালে ন্যাথেনিয়েল ব্রাসি হ্যালহেডের ‘এ গ্রামার অফ দি বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’ প্রকাশিত হয়। এটি ছিলো সম্পূর্ণ ইংরেজী ভাষায় রচিত, তবে এতে চার্লস উইলকিনসন এবং পঞ্চানন কর্মকারের যৌথ প্রচেষ্টায় ছাপাখানার জন্য প্রবর্তিত বাংলা হরফের সাহয্যে উদাহরণগুলো মুদ্রিত হয়। পরবর্তীতে উনিশ শতকে ইংরেজীতে এবং বাংলায় অনেক বাংলা ব্যাকরণ রচিত হয়। বিশ শতকের শুরুতে বাংলা ভাষা ও ব্যাকরণ চর্চার ব্যাপক প্রসার ঘটে।
এরপর ১৮০১ সালে উইলিয়াম কেরি-র ব্যাকরণ এবং ১৮১৬ সালে গঙ্গা কিশোর ভট্টাচার্যের ব্যাকরণ রচিত হয়। ১৮৩৩ সালে কলকাতার স্কুল বুক সোসাইটি ‘গৌড়ীয় ব্যাকরণ’ শীর্ষক রাজা রামমোহনের লেখা ব্যাকরণ প্রকাশ করে। পরবর্তীতে ড.সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. সুকুমার সেন, ড. এনামুল হক প্রমুখ বাংলা ব্যাকরণ লিখেছেন।
ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা
ভাষাকে শুদ্ধরূপে জানা ও ব্যবহার করার জন্য বাংলা ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। কারণ ব্যাকরণের কাজই হলো ভাষার চলার পথ সুনির্দিষ্ট করে দেয়া। বাংলা ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তার মধ্যে নিচের কারণগুলো উল্লেখযোগ্য:
ভাষার প্রকৃতি ও স্বরূপ জানার জন্য: মনের ভাব অনেকভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে, যেমন: ইশারা, ইঙ্গিতে, কথা বা ছবির মাধ্যমে। তবে ভাষার মাধ্যমে মনের ভাব সঠিকভাবে প্রকাশ করতে ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজন আছে। কেননা ব্যাকরণ ভাষার প্রকৃতি বা স্বরূপ বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভূলত্রুটি নির্ণয় করে শুদ্ধতার নিশ্চয়তা দেয়।
শুদ্ধ উচ্চারণ ও বানান শেখার জন্য: ভাষা লিখতে প্রয়োজন বর্ণের এবং উচ্চারণের জন্য প্রয়োজন ধ্বনির। আর এই বর্ণ এবং ধ্বনিগুলোর শুদ্ধ উচ্চারণ ও বানান ধ্বনিতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়। বাংলা ভাষায় উ, ঊ এবং যুক্ত বর্ণের প্রচলন আছে। এছাড়াও আছে ণ,ন,শ,ষ,স এর ব্যবহার। ব্যাকরণ পাঠের মাধ্যমে এগুলোর উচ্চারণ পার্থক্য, বানান বিধি জানা যায়।
শব্দের অর্থ, গঠণ ও ব্যবহার জানার জন্য: শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে শব্দের সঠিক অর্থ নির্ণয়ের জন্য এবং নতুন শব্দ গঠণের জন্য রূপতত্ত্ব সম্বন্ধে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। শব্দ গঠণ এবং সংক্ষিপ্ত করার উপায় হচ্ছে সন্ধি, সমাস, প্রত্যয়, উপসর্গ প্রভৃতি। যেমন: তিন ফলের সমাহার না বলে আমরা বলি ‘ত্রিফলা ‘। ব্যাকরণ না জানলে এসব শব্দের ব্যবহার অসম্ভব।
বাক্য তৈরী ও তার অর্থ প্রকাশের জন্য: বাক্য গঠণ এবং এর সঠিক অর্থ প্রকাশের জন্য এর সাধারণ অর্থ, ভাবার্থ ও ব্যঞ্জনাময় অর্থ জানতে হবে। এছাড়া সরল বাক্য ও জটিল বাক্য গঠণ প্রক্রিয়া জানতে হবে যা বাক্যতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়। আবার একই শব্দ বাক্য গঠণের ভিন্নতার কারণে কখনও বিশেষ্য, কখনও বিশেষণ হয়। বাগধারার ব্যবহার, উক্তির পরিবর্তন প্রভৃতিতেও বাক্যতত্ত্ব সাহায্য করে।
কবিতা ও গানের ছন্দ এবং অলঙ্করণের জন্য: ছন্দের শুদ্ধতা, ত্রুটি-বিচ্যুতি ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয়। তাছাড়া ভাষার অলঙ্কার প্রয়োগ এবং এর পদ্ধতিও ব্যাকরণ নির্ণয় করে।
সাহিত্যের গুণ বিবেচনার জন্য: সাহিত্যের গুণ, রীতি, দোষ, অলঙ্কার প্রভৃতি সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে হলে ব্যাকরণ পাঠের বিকল্প নেই।
Grammar
Read More
- Tea Stall - Paragraph for HSC and SSC
- School Magazine - Paragraph for HSC and SSC
- Load Shedding - Paragraph for HSC and SSC
- National Flag - Paragraph for HSC & SSC
- Mobile Phone - Paragraph for HSC & SSC
- Digital Bangladesh - Paragraph for HSC and SSC
- Internet - Paragraph for HSC & SSC
- Diaspora - Paragraph for SSC and HSC
- Dengue Fever - Paragraph for SSC and HSC
- Adolescence - Paragraph for SSC & HSC